🏷️ মতামত

হলুদ অটোর নগর-সাম্রাজ্য: বরিশাল নগরীর বেপরোয়া এক “অতিথি”

📍 : আরলিন

| 📅 5 December, 2025, 10:34 am

0Shares

বরিশাল শহরটাকে দূর থেকে দেখলে মনে হয়; একটা শান্ত, নদীঘেরা, সূর্যাস্তে মোড়া নগর। কিন্তু রাস্তার কাছে গেলেই বোঝা যায়, এই শান্ত শহরের বুকের ভেতর একটা গোলমাল জমে আছে। যেন কারো অনুমতি ছাড়াই কেউ এসে উঠোনে দোকান খুলে বসেছে। সেই অনাহূত আগন্তুক ‘ব্যাটারি চালিত হলুদ অটো’ আর ‘অটো কিক্সা।’

নগরীতে মানুষের ভিড় যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এই যানবাহনের সংখ্যা। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো যে শহরে নতুন একটি নালা বানাতে হলেও একগাদা নথি লাগে, সেই শহরে হাজার হাজার হলুদ অটো কীভাবে ঢুকে পড়ে; কারো জানা নেই। সিটি করপোরেশন বলে “আমরা দেইনি।” বিআরটিএ বলে “আমরাও না।” কিন্তু রাস্তায় তাকালে কি মনে হয় অপনার? এরা কোন দফতারের আত্ময়ী-স্বজন?

এদের শক্তি আবার “অনুমতিপত্র” না থাকায় কমে যায়, এমনও না। বরং মনে হয়, সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেই গাড়ির সাহস দ্বিগুণ বাড়ে। মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী নামায়, উল্টা-পাল্টা ব্রেকিং সব কিছুই যেন দুনিয়ার স্বাভাবিক নিয়ম।

নগরীতে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা কম, এ যেমন সত্য। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও কি ওরা মানবে? বিশেষ করে সকাল-বিকেলে নগরীর রাস্তায় দাঁড়ালে বোঝা যায়, বরিশালের প্রধান রাস্তাগুলো শুধু শহরের নয়, বরং ব্যাটারি চালিত অটো এবং রিক্সা-রই সম্পত্তি। বাস, কার, মোটরসাইকেল- সবাইকে ওদের কাছে “ইজাজত নিয়ে চলতে” হয়।

এই অটো, আবার বেশ বুদ্ধিমান। লেন নেই? লেন বানিয়ে নেয়। স্টপেজ নেই? স্টপেজ নিজের মতো করে তৈরি করে নেয়। রাস্তার মাঝখানে যাত্রী উঠানো যেন ওদের জন্মগত অধিকার। এদের দাপট দেখে মাঝে মাঝে মনে হয়, বরিশালে যেউন্নয়ন হয়নি, তা নয়। ব্যাটারিচালিত হলুদ অটো ও রিক্সার উন্নয়ন হয়েছে, শহর পিছিয়ে পড়েছে।

শহরের প্রবেশের সময়ে অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকে সারি ধরে, যখন বয়স্ক মানুষ রাস্তা পার হতে ভয় পায়, তখন বোঝা যায়, নগর পরিকল্পনার চেয়ে “নগরের বিশৃঙ্খলা” অনেক দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। আর সে বিশৃঙ্খলাকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এই ব্যাটারিচালিত হলুদ অটো ও রিক্সা সম্রাটেরা।

এদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যে কার, সেটাই অস্পষ্ট। সিটি করপোরেশন বলবে এটা বিআরটিএর কাজ। বিআরটিএ বলবে এটা পুলিশের কাজ। পুলিশ বলবে অনুমোদন দেয়নি, তাই ধরাও কঠিন। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, সবাই কাজটা অন্যের উপর ঠেলে দেয়, আর রাস্তায় নিয়ম ঠেলে দেয় হলুদ অটো।

এই শহর তো এমন ছিল না। একসময় বরিশালের রাস্তায় হাঁটলে নদীর গন্ধ পাওয়া যেত, এখন ব্যাটারির গন্ধ পাই। একসময় রিকশা বেল বাজিয়ে চলে যেত, এখন হর্নের চিৎকারে মাথা ধরে যায়।

সবশেষে শহরবাসীর প্রশ্ন একটাই; এই হলুদ অটোর রাজত্ব কে থামাবে? নগর প্রশাসনের পক্ষে কি এত গাড়ি বন্ধ করা শৃঙ্খলায় আনা অসম্ভব? নাকি কেউ দেখেও না দেখার ভান করছে? নাকি নেপথ্যে অন্য কিছু চলছে!

যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শুধু শৃঙ্খলার বিষয় নয়, এটি শহরের সংস্কৃতি, নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের প্রশ্ন। বরিশাল যদি দক্ষিণাঞ্চলের হৃদয় হয়, তবে এই হৃদয়কে সুস্থ রাখতে এখনই প্রয়োজন সাহসী সিদ্ধান্ত, অনুমোদনহীন সব অটো বন্ধ করা, ট্রাফিক পুলিশ বাড়ানো, এবং শহরের রাস্তাকে মানুষের জন্য ফিরিয়ে দেওয়া।

কথাটা কঠিন, কিন্তু সত্য; বরিশালে যানজটের মূল কারণ মানুষ নয়; মানুষকে অবহেলা করা প্রশাসন আর অচেনা ব্যাটারিচালিত হলুদ অটো ও রিক্সাদের অনিয়ন্ত্রিত “স্বাধীনতা”। শহরকে বাঁচাতে হলে; এই দুইকেই থামাতে হবে নয়তো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে হবে।

মন্তব্য কলাম লিখেছেন-আরলিন